নর-নারীর সমন্বয়েই মানবজাতি। নারীরা মা, স্ত্রী, বোন ও কন্যার পরিচয় বহন করে। আর ইসলাম নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা। বিশেষকরে সামাজিকভাবে নারীদের অবস্থান যখন ছিল অমানবিক; তখন থেকেই ইসলাম নারীদের সামাজিক মর্যাদা ও সম্মানের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
মা হিসেবে নারীর মর্যাদা :
ইসলামে মা হিসেবে নারীর মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চ। পবিত্র কোরআন এবং হাদিসে মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও মায়ের মর্যাদা সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। মা হিসেবে নারীর মর্যাদা ইসলামে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে সন্তানদের প্রতি তাদের প্রতি দয়া, ভালোবাসা, এবং সেবা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন—”আমরা মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং তার দুধ ছাড়ানো হয়েছে দুই বছরে।”
(সূরা লোকমান—১৪)
এই আয়াতে মা হিসেবে নারীর অসাধারণ আত্মত্যাগ এবং সন্তানের প্রতি মায়ের অবদানের স্বীকৃতি দেয়।
হাদিসে মা হিসেবে নারীর মর্যাদা আরও বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।একদা একব্যক্তি রাসূল (সা) কে জিজ্ঞেস করলেন ” হে আল্লাহর রাসূল আমার উপর কার সবচেয়ে বেশি হক রয়েছে? তখন রাসুল (স) তিনবার মায়ের কথা উল্লেখ করেন”। এই হাদিসে মায়ের মর্যাদাকে তিনবার উল্লেখ করে তার প্রতি সন্তানের দায়িত্বের বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
সম্পদে নারীর অধিকার:
ইসলাম নারীদের সম্পত্তির অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং সুরক্ষা দিয়েছে, যা ৭ম শতাব্দীর আরব সমাজে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ছিল। আধুনিক যুগেও ইসলামী নির্দেশনা নারীদের জন্য একটি ন্যায়বিচারপূর্ণ অর্থনৈতিক কাঠামো প্রদান করে।সূরা নিসা ৩২ নং আয়াতে বলা হয়েছে “পুরুষের জন্য রয়েছে তাদের অর্জিত সম্পত্তিতে অংশ, আর নারীদের জন্য রয়েছে তাদের অর্জিত সম্পত্তিতে অংশ”।
নারী শিক্ষায় ইসলামের বাণী:
ইসলামে নারী শিক্ষার মর্যাদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য জ্ঞান অর্জন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একজন শিক্ষিত নারী তার পরিবার, সমাজ এবং জাতির উন্নয়নে অসামান্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম।ইসলামের ইতিহাসে নারীদের শিক্ষার গুরুত্বের বহু উদাহরণ রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর স্ত্রী আয়েশা (রা.) ছিলেন একজন বিদুষী, যিনি হাদিস, ইসলামি আইন এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানেও বিশেষ পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। অনেক সাহাবী তাঁর কাছে জ্ঞান অর্জন করেছেন।রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ।” (ইবনে মাজাহ)
এই হাদিস স্পষ্টভাবে নারী শিক্ষার গুরুত্ব নির্দেশ করে।তবে,ইসলামে নারী শিক্ষার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। ইসলাম শালীনতা, নিরাপত্তা এবং সামাজিক নৈতিকতার ওপর জোর দেয়। ইসলামের শিক্ষা অনুসারে নারীর শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে পরিবেশ হতে হবে নিরাপদ এবং নৈতিকতা রক্ষাকারী।
বিবাহের মাধ্যমে নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি:
আইয়ামে জাহেলিয়াতে বৈবাহিক ক্ষেত্রে নারীদের কোনোরূপ অধিকার ছিল না। তারা শুধু পুরুষের ভোগের সামগ্রী ছিল। ইসলাম এহেন ঘৃণিত প্রথার মূলোৎপাটন করত: নারী ও পুরুষের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের নির্দেশ দিয়ে নারীর মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি করেছে।
ইসলামে বিবাহ নারীকে মর্যাদা, সম্মান এবং অধিকার প্রদান করার একটি মাধ্যম। এটি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ভিত্তি স্থাপন করে এবং সমাজে ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে। ইসলামের এ বিধান নারীর সার্বিক উন্নয়ন ও মর্যাদার একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ।
ইসলামে নারীর অর্থনৈতিক বিধান:
ইসলামে নারীদের অর্থনৈতিক মর্যাদা তাদের ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে সম্মানিত অবস্থান নিশ্চিত করে। এটি নারীদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য ন্যায্যতার ভিত্তিতে নির্মিত।ইসলাম নারীদের নিজস্ব সম্পদ অর্জন ও উপার্জনের পূর্ণ অধিকার প্রদান করেছে। যদি একজন নারী চাকরি, ব্যবসা বা অন্য কোনো পেশা গ্রহণ করেন, তবে তার উপার্জিত অর্থ তার ব্যক্তিগত সম্পদ হিসেবে গণ্য হবে, এবং তা ভোগ করার পূর্ণ অধিকার তার থাকবে।তাছাড়া ইসলামে নারী উত্তরাধিকারের অধিকার পায়। কোরআনের সূরা নিসা-এ নারীদের জন্য উত্তরাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও পুরুষের তুলনায় নারীদের অংশ কিছু ক্ষেত্রে কম (যেমন, ভাই-বোনের ক্ষেত্রে), তবে নারীর আর্থিক দায়িত্ব সীমিত হওয়ায় এটি সুবিবেচিত।
ইসলামে নারীর নিরাপত্তার বিধান :
ইসলাম নারীদের মর্যাদা ও সুরক্ষার জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন করেছে, যা তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং পারিবারিক জীবনে সুরক্ষা নিশ্চিত করে।ইসলামী নীতিমালা যথাযথভাবে পালন করলে নারীরা সুরক্ষিত, মর্যাদাপূর্ণ এবং সুখী জীবন যাপন করতে পারে।
ইসলামে নারীর মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চ। ইসলাম নারীকে সম্মান, অধিকার ও মর্যাদা প্রদান করেছে, যা পূর্বে অনেক সমাজে অনুপস্থিত ছিল। কুরআন ও হাদিসে নারীদের শিক্ষা, সম্পত্তির অধিকার, বিবাহে সম্মতি, উত্তরাধিকার এবং সমাজে অবদান রাখার সুযোগকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইসলামে মা, স্ত্রী, কন্যা ও বোন হিসেবে নারীর ভূমিকা বিশেষভাবে মূল্যায়িত। হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, “মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত।” (তিরমিজি) – যা নারীর মর্যাদার অনন্য উদাহরণ।
এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে উপলব্ধি করা যায় যে, ইসলাম নারীদের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করেছে, যা অন্য অনেক সভ্যতায় ছিল না। নারীদের প্রতি দয়া, সম্মান এবং ন্যায্য আচরণ ইসলামের মৌলিক শিক্ষা।
Leave a Reply