,

উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ধস: একই পরিবারের তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু

শাকুর মাহমুদ চৌধুরী, কক্সবাজার

কক্সবাজারের উখিয়ার ১৪ নম্বর হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবল বর্ষণের ফলে সৃষ্ট ভয়াবহ পাহাড়ধসে একই পরিবারের তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন—কবির আহমেদের ছেলে আব্দুর রহিম, আব্দুল হাফেজ এবং আব্দুল ওয়াহেদ।

অতিরিক্ত বর্ষণের কারণে পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে এবং মুহূর্তেই বিধ্বস্ত হয়ে যায় তাদের ঘর। পাহাড় ধসের ঘটনায় তিনটি ঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দল ও উদ্ধারকর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উদ্ধারকাজ চালায়। তবে মাটির নিচে চাপা পড়ায় তাদের জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পরে মাটি সরিয়ে তিনজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

কক্সবাজার ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা নয়ন এ ঘটনার বিষয়ে বলেন, হাকিমপাড়া ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ধসের ঘটনায় তিনটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে একই পরিবারের তিনজন মারা গেছেন। স্বেচ্ছাসেবক দল ও প্রশাসনের সহযোগিতায় উদ্ধারকাজ চলছে। ক্যাম্পের অন্যান্য বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজও চলছে।

গত বুধবার থেকে শুরু হওয়া টানা ভারী বর্ষণের ফলে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধস ও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে উখিয়া উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে ভূমিধসের ঝুঁকি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে পানির চাপ বেড়ে যাওয়ার কারণে ভূমি আরও দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা ভূমিধসের সম্ভাবনাকে ত্বরান্বিত করছে। উখিয়া ও এর আশপাশের গ্রামগুলোতেও বন্যা এবং পাহাড় ধসের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে পাহাড় ধসের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। কারণ এসব ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা অস্থায়ীভাবে পাহাড়ের ঢালে আবাসন তৈরি করেছেন। এ ধরনের দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ আবাসস্থলগুলি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করে দিয়েছেন যে, পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তোলার ফলে ভূমিধসের সম্ভাবনা বেড়ে গেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ভারী বর্ষণের সময় ভূমিধসের কারণে প্রাণহানির ঘটনা ক্রমশই বাড়ছে।

পাহাড়ধসের ঘটনায় উদ্ধারকাজ শুরু করা হলেও বৃষ্টিপাতের তীব্রতার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধারকর্মীরা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করার জন্য। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বন্যার পানি বৃদ্ধির কারণে অন্যান্য এলাকাতেও প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকরা তৎপর রয়েছেন।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক বলেন, বন্যা ও ভূমিধসের ঝুঁকিতে থাকা এলাকাগুলোর জন্য ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে জরুরি ত্রাণ সহায়তাও প্রদান করা হচ্ছে।

কক্সবাজারের শহর ও আশেপাশের এলাকাগুলোতে বৃষ্টির কারণে বেশ কয়েকটি স্থানে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। নিচু এলাকাগুলোতে বন্যার পানি ঢুকে অনেক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানির চাপে বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষিজমি, ঘরবাড়ি, ও গবাদিপশু তলিয়ে গেছে। স্থানীয় জনগণ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে, বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন যে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বারবার এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটছে, যা শুধুমাত্র প্রাকৃতিক কারণ নয়, বরং অপ্রয়োজনীয় পাহাড় কাটার ফলেও ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ছে। দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য এই সমস্যা নিয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে গুরুত্ব সহকারে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

পাহাড় ধস ও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন এবং ত্রাণকর্মীরা যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কক্সবাজার ও তার আশেপাশের এলাকায় পাহাড় কাটার ফলে ভূমিধসের সম্ভাবনা বেড়ে গেছে। এসব এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন জরুরি।

পাহাড় ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোধ করতে সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category