শাকুর মাহমুদ চৌধুরী, কক্সবাজার থেকেঃ
গত কয়েক বছরে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে প্রায় ২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অধিকাংশ ড্রেন ও সড়ক নতুনভাবে সংস্কার করা হলেও বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে মানুষের জীবনে চরম ভোগান্তি নেমে এসেছে। পৌরবাসীর মতে, অপরিকল্পিত রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ, ড্রেন দখল ও ভরাটের কারণেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে পুরো পর্যটন শহর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কক্সবাজারের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল হান্নান জানান, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩৩৪ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই বৃষ্টিপাত আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে বেড়েছে জনদুর্ভোগ। প্লাবিত হয়েছে জেলার নিম্নাঞ্চলসহ বিভিন্ন উপজেলার রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজার হাজার একর জমির ফসল। ফলে লাখো মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে, থমকে গেছে স্বাভাবিক কার্যক্রম।
শহরের গোলদিঘি, ঘোনার পাড়া, বৈদ্যঘোনা, বৌদ্ধ মন্দির সড়ক, বড় বাজার, টেকপাড়া, কালুর দোকান, তারাবনিয়ারছড়া, পাহাড়তলী, নুর পাড়া, সমিতি পাড়া, নাজিরারটেক, ফদনার ডেইল, কুতুবদিয়া পাড়া ও হোটেল মোটেল জোনসহ বেশিরভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকায় যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ রয়েছে। বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে গেছে মূল্যবান মালামাল। অনেকের চুলায় দুপুর ৩টা পর্যন্তও আগুন জ্বলেনি।
কক্সবাজার দেখতে আসা পর্যটকেরা হোটেলে আটকে পড়েছেন। ঢাকার আরামবাগ থেকে আসা পর্যটক দম্পতি আবদুর রহিম ও দিলরুবা আফরিন চুন্নি বলেন, “বুধবার কক্সবাজারে আসার সময় বৃষ্টি ছিল না। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোর থেকে তীব্র বৃষ্টি হচ্ছে, ফলে কোথাও যেতে পারছি না।
কক্সবাজার সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে হাঁটু সমান পানি ওঠায় এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা সীমাহীন কষ্ট করে কেন্দ্রে প্রবেশ করেছে। পানি ঢুকে ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। সিভিল সার্জন, সদর রেজিস্ট্রি অফিসসহ একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে।
পর্যটন ব্যবসায়ী এম আর মাহবুব জানান, প্রবল বৃষ্টির সাথে উপর থেকে ধেয়ে আসা ঢলের পানিতে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোন প্লাবিত হয়েছে। অধিকাংশ আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, দোকানে ঢলের পানি ঢুকেছে।
টেকপাড়ার বাসিন্দা সোহেল রানা বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক থাকায় কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে পুরো টেকপাড়া, চাল বাজার, বড় বাজার, পেশকার পাড়া, হাঙর পাড়া, বড় পুকুর রোড, উত্তর টেকপাড়াসহ আশপাশ তলিয়ে যাচ্ছে।
বৌদ্ধ মন্দির এলাকার ক্যাং পাড়ার বাসিন্দা উক্য থেন বলেন, “ভোর ৪টা থেকে ৭টা পর্যন্ত একটানা বৃষ্টি হয়। এতে এই এলাকার সবকিছু পানির নিচে তলিয়ে যায়।
খুরুশকুলের চেয়ারম্যান শাহজাহান ছিদ্দিকী বলেন, মানুষের বসতভিটা, রাস্তা ও ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে।
ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, ভোরে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জানার ঘোনা ও হাজিপাড়া এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম বলেন, “শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌরসভার বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে। তবে কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা রহমান বলেন, স্থানীয়দের সহযোগিতায় জলাবদ্ধতার কারণ উদঘাটন করে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, প্লাবিত এলাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হচ্ছে। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের সরাতে মাইকিং ও তৎপরতা শুরু হয়েছে।
Leave a Reply