,

‘নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করুন, ধর্মনিরপেক্ষ মানবিক সমাজ গড়ে তুলুন’

২১ অক্টোবর ২০২৩, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি রাজশাহী জেলা ও মহানগর কর্তৃক আয়োজিত ‘আমার ভোট আমি দিব, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দিব’ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অভিযাত্রা শীর্ষক এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। নির্মূল কমিটির রাজশাহীর জেলা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্ববায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী বরজাহান সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। সম্মেলন উদ্বোধন করেন নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাজশাহী জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন নির্মূল কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ কামারুজ্জামান।

আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা বুলবুল রাণী ঘোষ, নির্মূল কমিটির রাজশাহী জেলা ও মহানগরের সহ সভাপতি আব্দুল লতিফ চঞ্চল, নির্মূল কমিটির রাজশাহী জেলা ও মহানগর সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব তামিম শিরাজী, স্টুডেন্ট ফ্রন্ট-এর সাধারণ সম্পাদক ইখতিয়ার প্রামাণিক, স্টুডেন্ট ফ্রন্ট-এর সভাপতি মহিউদ্দিন মিঠু, নারী ইউনিট-এর সভাপতি আলিমা খাতুন লিমা, নির্মূল কমিটির চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ, রাজশাহী মহানগর সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ ৭১ সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান উজ্জল, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মোঃ মাহীর রহমান, রাজশাহী জেলার মুক্তিযুদ্ধ পাঠাগার-এর সভাপতি কামারুল্লাহ সরকার ও সমাজতান্ত্রিক দল রাজশাহী জেলার সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলি।

নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতির পাকিস্তানিকরণ প্রতিহত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার জন্য আমরা ৩১ বছর আগে যে নাগরিক আন্দোলনের সূচনা করেছিলাম তার আংশিক বিজয় অর্জিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, মানবতার জননী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আবার আরম্ভ করেছেন, সংবিধানের চার মূলনীতি পুনঃস্থাপন করেছেন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যে অতুলনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন তা আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছিÑ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের সাফল্য ও উন্নয়নের এই ধারা স্তব্ধ করে, যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার বন্ধ করে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ, সন্ত্রাসী, জঙ্গি রাষ্ট্র বানাবার জন্য জামায়াত-বিএনপির মতো ’৭১ ও ’৭৫-এর খুনিরা আবার মাঠে নেমেছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা আন্দোলনের নামে তাণ্ডব করছে এবং গৃহযুদ্ধের হুমকি দিয়ে বিদেশী হস্তক্ষেপ ও আগ্রাসনের ক্ষেত্র তৈরি করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বাংলাদেশের তরুণ সমাজের প্রতি আমাদের আহ্বানÑ যারা এবার প্রথম অথবা দ্বিতীয়বার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে যাচ্ছেন, আপনাদের দেশপ্রেম এবং সুচিন্তিত সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে জাতির ভবিষ্যৎ। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি মানবিক উন্নয়নের সূচকেও আমরা যাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে দৃষ্টান্ত হতে পারি, সে ক্ষেত্রে তরুণদের সকল কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে শঙ্কামুক্ত করে উৎসবে পরিণত করুন। যারা অশান্তি ও সন্ত্রাসের দ্বারা নির্বাচন বানচাল করতে চায় তাদের প্রতিহত করুন। আমাদের প্রত্যাশাÑ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌম মর্যাদায় বিশ্বাসী সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুসারী সৎ ও যোগ্য প্রার্থীদের মনোনয়ন দেবে। ভোট আমাদের পবিত্র আমানত। আমরা কোনওভাবে এর অমর্যাদা করব না।’

নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ গঠন করেছিলেন দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সদস্যরা। সারা দেশে এবং বহির্বিশ্বে আমাদের শতাধিক শাখা রয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তরুণ প্রজন্মকে আলোকিত করে ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, মানবিক রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ার আন্দোলন পরিচালনা করছি। ১৯৯২ সালের জানুয়ারি মাসে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠনের পর প্রধানত: আমাদের আন্দোলনের কারণে ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি ক্ষমতায় আসে।

’৯৬-এর নির্বাচনের প্রাক্কালে আমরা তরুণ ভোটারদের সচেতন করার জন্য ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অভিযাত্রা’ আরম্ভ করেছিলাম। আমাদের প্রধান শ্লোগান ছিলÑ ‘রাজাকারমুক্ত সংসদ চাই’। আমরা চাই ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের মূল্যে অর্জিত পবিত্র জাতীয় সংসদে আমাদের জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তারাই যাবেন যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন, যারা জনগণের সম্পদ আত্মসাৎ করেন না, যারা দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত নন, যারা প্রকৃত অর্থে এ দেশের মাটি ও মানুষকে ভালবাসেন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাজশাহী জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট জনগণের মৌলিক অধিকার। আপনাদের কাছে আমাদের আবেদনÑ যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, যারা ’৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে, যারা গণতন্ত্রের নামে গৃহযুদ্ধের হুমকি দিয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো ব্যর্থ, সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, যারা বাংলাদেশকে জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল, যারা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বছরের পর বছর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিলÑ তাদের দ্বারা প্রতারিত হবেন না। যারা ’৭১-এর ঘাতক, দালাল এবং তাদের সহযোগী ও উত্তরাধিকারীদের ভোট দেবেনÑ তারা ৩০ লক্ষ শহীদের পবিত্র রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করবেন।’

আলোচনা শেষে নির্মূল কমিটির রাজশাহী জেলার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী বরজাহান, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোসনা আরা খাতুন, রাজশাহী মহানগরের সভাপতি আব্দুল লতিফ চঞ্চল, সাধারণ সম্পাদক তামিম শিরাজী, নির্মূল কমিটির রাজশাহী নারী ইউনিটের সভাপতি মোসা: হালিমা কুমকুম, সাধারণ সম্পাদক সায়মা খাতুন বিথি, নির্মূল কমিটির রাজশাহী যুব ফ্রন্টের সভাপতি মহিউদ্দিন মিঠু, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ হোসেন, নির্মূল কমিটির রাজশাহী স্টুডেন্ট ফ্রন্টের সভাপতি ইখতিয়ার প্রামানিক, সাধারণ সম্পাদক আরাফাত হোসেন-দের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category